আলুর রোগ

রোগ- আলুর মড়ক বা নাবী ধ্বসা রোগ (Late Blight of Potato)

রোগের লক্ষন –

“আলুর লেইট ব্লাইট বা মড়ক রোগ বিশ্বজুড়ে অন্যতম একটি ক্ষতিকারক রোগ। এ রোগ বাংলাদেশের আলু উৎপাদনের প্রধান অন্তরায়। ১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে আলুর চাষাবাদ বিস্তারের পাশাপাশি এ রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকে। এটি মূলত এক ধরনের শ্যাওলা/শৈবাল (algae) জাতীয় উদ্ভিদ। এ কারণেই স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। এর প্রাথমিক ও প্রধান পোষক আলু।

১. Phytophthora intestans নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়।
২. ফসলের বাড়ন্ত পর্যায়ে আক্রমণ করে।
৩. ফসলের পাতার অংশে আক্রমণ করে। ৪. প্রাথমিক অবস্থায় পাতার উপর ছোপ ছোপ ভেজা বাদামী বা ফ্যাকাশে গোলাকার ও এলোমেলো পানিভেজা দাগ দেখা যায়।
৫. আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ সমস্ত দাগ সংখ্যায় ও আকারে দ্রুত বাড়তে থাকে এবং বাদামী থেকে কালো রঙ ধারণ করে।
৬. পাতার নিচে সাদা সাদা পাউডারের মত ছত্রাক দেখা যায়।”

সমন্বিত রোগ ব্যবস্থাপনা-

“জৈবিক পদ্ধতিতে দমনঃ
১. রোগমুক্ত ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
২. বর্ষা আরম্ভ হওয়ার আগে আগেই শুষ্ক আলু রোগমুক্ত এলাকা হতে বীজের জন্য সংগ্রহ করতে হবে।
৩. অনেক সময় বীজ আলু ভাদ্রের প্রখর রৌদ্রে একমাস ভাল করে শুকাতে হয়। এর ফলে আলুতে কোন প্রকার জীবাণু থাকলে রৌদ্র তাপে তা নষ্ট হয়ে যায়।
৪. প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন জাতের বীজ ব্যবহার করা।
৫. আক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে ধ্বংস করা।
রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমনঃ
১. এসিবিন ২৮ এস সি ৫ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
২. অথবা মিটপ ৬০ ডব্লিউ জি ১৫ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
৩. অথবা নেমিসপোর ৮০ ডব্লিউ পি ৪৫ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
৪. অথবা নিউবেন ৭২ ডব্লিউ পি ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
৫. অথবা এক্সট্রামিল ৭২০ ডব্লিউ পি ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
৬. অথবা কেমামিক্স ৭৫০ ডব্লিউ পি ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।”

রোগ- আলুর স্ক্যাব বা দাদ রোগ (Scab of Potato) লক্ষণ-

“১. হালকা দাদ হলে টিউবারের উপরে উঁচু এবং ভাসা বিভিন্ন আকারের বাদামী দাগ পড়ে।
২. রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে টিউবারের গায়ে গোলাকার গর্ত বা ডাবা ডাবা পরে।
৩. রোগের আক্রমণ সাধারণত ত্বকেই সীমাবদ্ধ থাকে।”

সমন্বিত রোগ ব্যবস্থাপনা-

“জৈবিক পদ্ধতিতে দমনঃ
১. রোগমুক্ত ভালো বীজ ব্যবহার করা।
২. জমিতে মাটি পরীক্ষায় সুপারিশকৃত ইউরিয়ার বেশি ব্যবহার না করা ও বোরন সার ব্যবহার করা।
৩. জমিতে হেক্টর প্রতি ১২০ কেজি জিপসাম ব্যবহার করা।
রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমনঃ
১. আলুর দাদ রোগ দমনের জন্য- এক্সট্রামিল ৭২০ ডব্লিউ পি ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
২. অথবা নিউবেন ৭২ ডব্লিউ পি ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
৩. অথবা প্রাউড ২৫ ই সি ১০ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।”

রোগ- আলুর পাউডারী মিলডিউ (Potato Powdery Mildew)

রোগের লক্ষন –

“১. পাতা ও গাছের গায়ে সাদা পাউডারের মত দাগ দেখা যায়, যা ধীরে ধীরে সমস্ত পাতায় ছড়িয়ে পড়ে ।
২. আক্রমণ বেশী হলে পাতা হলুদ বা কালো হয়ে মারা যায় ।”

সমন্বিত রোগ ব্যবস্থাপনা-

“জৈবিক পদ্ধতিতে দমনঃ
১. আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে নষ্ট করা।
২. সুষম সার ব্যবহার করা।
৩. রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করা।
৪. আক্রান্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করবেন না।
রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমনঃ
১. পূর্ব প্রস্তুতির জন্য চারা অবস্থায়- এমকোজিম ৫০ ডব্লিউ পি ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
২. রোগ দেখা দিলে- মিটপ ৬০ ডব্লিউ জি ১৫ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
৩. অথবা কেমামিক্স ৭৫০ ডব্লিউ পি ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
৪. অথবা ব্লাস্টিন ৭৫ ডব্লিউ ডি জি ৫ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।”

রোগ- আলুর ঢলে পড়া রোগ (Potato Wilt)

রোগের লক্ষন –

“১. প্রথমে কচি পাতা ঢলে পড়ে বা নিচের বয়স্ক পাতা বির্বণ হয়ে যায়।
২. প্রথম দিকে গাছের অংশ বিশেষ, কয়েক দিন পরে পুরো গাছ ঢলে পড়ে।
৩. আক্রান্ত কান্ডের ভিতরের অংশ কাল বাদামি রঙ ধারন করে, পানি গ্রহণে বাঁধা দেয়।
৪. গাছের গোড়ার প্রায় ২ ইঞ্চি ডাল কেটে পানিতে ৫-১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখলে কাটা অংশ হতে কোন রস বের না হয়, পানির রঙের কোন পরিবর্তন না হয় তাহলে ছত্রাকের আক্রমণ বুঝতে হবে। বের হলে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমন।”

সমন্বিত রোগ ব্যবস্থাপনা-

“জৈবিক পদ্ধতিতে দমনঃ
১। এই রোগের নিরাময়ের জন্য সর্বপ্রথম বীজ আলু রোগমুক্ত হতে হবে।
২। আলুকে গুদামজাত করার সময় আলুর সঙ্গে কিছু রসুন মিশিয়ে রাখতে হবে।
৩। হিমাগারের তাপমাত্রা ৫০°-১৩০° সেঃ নিয়ন্ত্রন করা উচিৎ।
বীজ বপনের পূর্বে ফরমালিনে ডুবিয়ে রাখতে হবে।
৪। আলু ক্ষেতে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা করে এর মাটি ঝুরঝুরে করে রাখতে হবে।
রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমনঃ
১. বীজ জমিতে বপন করার পূর্বে বীজকে ছত্রাকনাশক দ্বারা শোধন করে নিতে হবে। এজন্য- এমকোজিম ৫০ ডব্লিউ পি ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
২. ছত্রাকের আক্রমণ হলে- নেমিসপোর ৮০ ডব্লিউ পি ৪৫ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে। ৭ দিন পরপর ৩ বার গাছের গোড়ায় ও মাটিতে স্প্রে করুন।
৩. আক্রমণ বেশি হলে- রোভানন ৫০ ডব্লিউ পি ২০ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতক জমিতে স্প্রে করতে হবে।
৪. ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ হলে ক্ষেতের মাটিতে বিঘাপ্রতি ২ কেজি হারে ব্লিচিং পাউডার ছিটাতে হবে।”

রোগ- আলুর ইয়োলোভাইরাস রোগ (Potato Yellow Virus)

রোগের লক্ষন –

“১. এর রোগ হলে গাছে হলুদ ও গাঢ় সবুজ ছোপ ছোপ মোজাইক করা পাতা দেখা দেয় এবং পাতা কুঁকড়ে যায়।
২. আক্রান্ত পাতা হলদে হয়ে যায়, বিচিত্র আকারের দাগ দেখা যায়, কুকড়ে যায়।
৩. গাছ ছোট হয়ে যায়।”

সমন্বিত রোগ ব্যবস্থাপনা-

“জৈবিক পদ্ধতিতে দমনঃ
১. রোগমুক্ত গাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা। ক্ষেত থেকে আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলতে হবে।
২. আক্রান্ত গাছ সংগ্রহ করে ধ্বংস করা।
রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমনঃ
১. জাব পোকা এ রোগের বাহক, তাই এদের দমনের জন্য- টিডো ২০ এস এল ৫ মিলি প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে। ১০ দিন পরপর ২/৩ বার।
২. অথবা টিডো প্লাস ৭০ ডব্লিউ ডি জি ২ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে।
৩. অথবা পাইরাজিন ৭০ ডব্লিউ ডি জি ৪ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে।”