অত্যাধুনিক তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে ‘কৃষিবাড়ী’ নামে একটি বিশেষ প্রকল্প চালু হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সামগ্রিকভাবে দেশকে ডিজিটাল করে ‘স্বপ্নের সোনার বাংলা’য় রূপান্তরে বর্তমান সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টায় এ প্রকল্প বিশেষ সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
ক্ষুদ্র ভূখণ্ডের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তা প্রধানতম চ্যালেঞ্জ। কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও খাদ্য উৎপাদনে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাতসমূহ, শিল্পায়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মত অবধারিত চ্যালেঞ্জও রয়েছে আমাদের। এমন বাস্তবতায় গবেষকরা অবিরতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কিভাবে স্বল্পতম ব্যয়ে সর্বোচ্চ ফলন নিশ্চিত করা যায়।
যেভাবে বাস্তবায়িত হবে প্রকল্পটি
সাম্প্রতিক বিশ্বে স্মার্ট এগ্রিকালচার মডেল অনুসরণে ‘ই-ভিলেজ’ নামের এই প্রকল্পটি পরীক্ষামূলকভাবে একটি গ্রামে বাস্তবায়িত হবে। এর মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতার আলোকে পরবর্তীতে এটিকে বৃহত্তর পরিসরে কৃষক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রকল্পের শুরুতে একটি আদর্শ কৃষি প্রধান গ্রাম বেছে নেওয়া হবে। বলে রাখা দরকার, কৃষক পর্যায়ে প্রযুক্তির নানামূখি ব্যবহার বাংলাদেশে এক দশকেরও আগে শুরু হয়। তখন থেকে বিভিন্ন কৃষক সহায়ক অ্যাপসের মাধ্যমে টেলিসেন্টার বা ডিজিটাল সেন্টার থেকে কৃষকদের পরিসেবা দেওয়া হচ্ছে। জোর দিয়েই বলা যায়, দেশজুড়ে ডিজিটাল সেন্টারগুলো কৃষক পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারকে অনেকগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও এসব অ্যাপস এর পরিসেবার অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে-অনেক সময় এগুলো রিয়েলটাইম হয় না।
‘ই-ভিলেজ’ প্রকল্পটি অতীতের সেসব সীমাবদ্ধতাকে জয় করে বেশকিছু নতুন প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটাতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে একটি স্মার্ট অ্যাপস তৈরী করা হবে। যা বাংলায় সহজে কৃষকের ব্যবহার উপযোগী, ছবি ও অডিও ভয়েসযুক্ত করা হবে। যার মাধ্যমে কৃষকরা তার জমির ও ফসলের কী অবস্থা তা জানতে পারবে। প্রকল্পের শুরুতে এটি সবজি ক্ষেতে সমীক্ষা চালানো হবে। ধীরে ধীরে তা অন্য ফসলে নিয়ে যাওয় হবে।
কৃষকরা সকালে ফোন সেটটি ওপেন করলেই তাতে একটি বার্তা যাবে, যাতে নির্দেশনা থাকবে-তাঁর ক্ষেতের সবশেষ কী অবস্থা। একই সাথে করণীয়গুলোও জানিয়ে দেবে-কী ধরণের ওষুধ, সার পানি বা অন্যান্য উপকরণ দিতে হবে। যদি তারা বাড়ির বাইরেও থাকে যাতে তার কাছে বার্তা যায় সে ব্যবস্থা থাকবে। কৃষকরা তাদের ক্ষেতের জটিল কোনো অবস্থাতে কারও কাছে দারস্থ না হয়ে নিজেই সমাধান করতে পারবেন।
স্থানীয় আবহাওয়া ও অন্যান্য উপযোগীতা বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু ডিভাইস উদ্ভাবন করা হবে। বিশ্বজুড়েই কিছু ডিভাইস সচারাচর পাওয়া যায়, কিন্তু তা খুবই ব্যয়বহুল। তারপরও আবার এটা দিয়ে কেবল একধরণের ডাটা পাওয়া যাবে। কিন্তু আমাদের কৃষকদের পক্ষে তো এতদাম দিয়ে তা কেনা সম্ভব নয়। এই পাইলট প্রকল্পে মাধ্যমে একটি সাশ্রয়ী ডিভাইস নিয়ে আসব, যা কৃষকরা সামর্থ্যরে নাগালে থাকবে। যাতে একজন বা একাধিক কৃষক মিলে ওই ডিভাইসটি কিনতে পারবে।
এই ডিভাইসটি নিজ থেকে পিএইচ লেভেল বলে দেবে, ক্ষতিকারক পোকামাকড় আছে কিনা তা বলে দেবে। এই ডাটাগুলো চলে আসবে সার্ভারে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এসব ডাটা বিশ্লেষণ-সুবিন্যাস করে সফটওয়ার উন্নয়ন করে তা অ্যাপসে যাবে। কৃষিবিদরা ডাটা বিশ্লেষণগুলো করে যথাযথ পরামর্শটা অ্যাপসে যুক্ত করবেন। কৃষকদের কাছে অ্যাপসের মাধ্যমে সরাসরি পরামর্শটা চলে যাবে।
ধারণা করা হচ্ছে, যদি পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রকল্প সফল হয় তাহলে ফসলের ফলন ২০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। কারণ হচ্ছে রোগবালাইসহ অন্যান্য সমস্যাগুলো যথাসময়ে চিহ্নিত করা যাবে ও যথাসময়ে তার প্রতিকার করা যাবে। অপরদিকে, উপাদান ব্যয়ও ২০ ভাগ কমবে। যার ফলে এটি আশা করা যায়, কৃষকরা ‘ই-ভিলেজ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০ ভাগ লাভবান হবে।
প্রকল্পটির এই প্রত্যাশ্যা বাস্তবে কতটা প্রতিফলিত হয়, সেজন্য টানা ৬ মাস এনিয়ে ধারাবাহিক গবেষণা চলবে। বাকী সময়ে অন্যান্য বিষয়মূহ সম্পন্ন হবে। সামগ্রিভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে তা আরও একধাপ অগ্রগতি হবে।