কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন অনন্য উদাহরণ।
বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে কৃষি। ২০১৮ সালের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যমতে, এটি মোট শ্রমশক্তির ৪০.৬ ভাগ যোগান দিয়ে থাকে এবং দেশের জিডিপিতে এর অবদান ১৪.১০ শতাংশ। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র দূরীকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় এই খাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
বাংলাদেশের জনগনের একটা বিশাল অংশ তাদের জীবনধারণের জন্য কৃষির উপর নির্ভর করে। যদিও ধান ও পাট এখানকার প্রধান ফসল তা সত্ত্বেও গমের বৃহত্তর গুরুত্ব রয়েছে। উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে চায়ের চাষ হয়ে থাকে। উর্বর জমি ও পানির প্রাচুর্যতার কারণে বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে বছরে তিন বার ধান উৎপাদন ও চাষাবাদ হয়ে থাকে। প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও অনেকগুলো কারণে বাংলাদেশের শ্রমনির্ভর কৃষিতে খাদ্য উৎপাদনে উন্নতির মাত্রা অর্জিত হয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ, সারের সর্বোত্তম ব্যবহার ও সরবরাহ এবং গ্রামীণ মানুষকে ঋণের আওতায় আনা। ২০০০ সালে চালের উৎপাদন পরিমাণ ছিল ৩৫.৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন, যা বাংলাদেশের প্রধান ফসল। ২০০৩ সালে ধানে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক যেমন গ্রানুলার কার্বোফুরান, সিনথেটিক পাইরোথ্রোইডস এবং ম্যালাথাইওন ইত্যাদির দেশীয় ব্যবহার ১৩০০০ টন ছাড়িয়ে যায়। কীটনাশক শুধু পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরুপ নয় বরং দরিদ্র চাষীর জন্য বাড়তি খরচের বোঝা হিসেবে দেখা দেয়। ধানে কীটনাশকের ব্যবহার কমাতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভিন্ন এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
ধানের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে, ১৯৯৯ সালে গমের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন। বাড়তি জনসংখ্যার চাপ উৎপাদনের ধারাকে ক্রমাগত বাঁধাগ্রস্ত করছে যা খাদ্য স্বল্পতা তৈরীর জন্য দায়ী, গম যার অন্যতম। বৈদেশিক সাহায্য ও বাণিজ্যিক আমদানি এই ঘাটতি পূরণ করছে। বেকারত্ব একটি প্রবল সমস্যা এবং বাংলাদেশের কৃষিখাতে উদ্বেগের অন্যতম একটি কারণ। ভবিষ্যতের সরকারগুলোর জন্যে কর্মসংস্থানের বিকল্প উৎস খোঁজা একটি জটিল সমস্যা হিসেবে দেখা দিবে বিশেষ করে ভূমিহীন চাষীদের নিয়ে যারা গ্রামীণ শ্রমের অর্ধেকের যোগানদাতা।
ধান, গম, আম ও পাট এখানকার প্রধান ফসল। সেচ সুবিধার ব্যাপক প্রসারের ফলে অনেক গম উৎপাদক ভুট্টা উৎপাদনে ঝুঁকে পড়ছে যা প্রধানত মুরগী খামারে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ধান বাংলাদেশের প্রধান ফসল, ২০০৫-০৬ সালে যার উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৮.৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন। অন্দিকে ২০০৫-০৬ সালে গমের উৎপাদন ছিল ৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ চাল উৎপাদক দেশ। গম বাংলাদেশের চিরায়ত কোন ফসল নয় এবং ১৯৮০ এর শেষের দিক থেকে গ্রামীণ এলাকায় অল্প পরিসরে এর উৎপাদন শুরু হয়। ষাট এবং সত্তরের দশকে এর চাহিদা বাড়তে থাকে কেননা সেসময় বৈদিশিক সাহায্যের অন্যতম উপকরণ ছিল গম। আশির দশকের প্রথমার্ধে দেশীয় গমের বাৎসরিক উৎপাদন ১ মিলিয়ন টন ছাড়িয়ে যায় কিন্তু এর পরিমাণ ছিল মোট উৎপাদিত খাদ্যের ৭ থেকে ৯ শতাংশ মাত্র। ১৯৮৫ অর্থবছরে রেকর্ড ১.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়। প্রায় অর্ধ শতাংশ গমের উৎপাদন ছিল সেচ সুবিধাযুক্ত জমিতে। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত গম চাষের জমির পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে যা কি না মোট চাষযোগ্য জমির ৬ শতাংশের কিছু কম।
আমদানিকৃত খাদ্যের বেশিরভাগই হচ্ছে গম যা প্রতি বছর ১ মিলিয়ন টন হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ১৯৮৪, ১৯৮৫ এবং ১৯৮৬ অর্থবছরে যা ১.৮ মিলিয়ন টন ছাড়িয়ে যায়। আমদানিকৃত গমের বেশিরভাগই খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় অর্থায়ন করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইকোনোমিক কমিটি এবং ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম।
খাদ্যশস্যের উৎপাদন মূলত দেশীয় চাহিদা মেটাতেই হয়ে থাকে। সীমিত পরিমানে কিছু শতাংশ বাণিজ্যিক ভিত্তি করা হয়ে থাকে। দেশীয় চাহিদা মেটাতে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের মধ্যে রয়েছে আলু ও মিষ্টি আলু, ১৯৮৪ অর্থবছরে উভয়ের মোট রেকর্ড উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৫০০০ টন। এছাড়াও উৎপাদিত ফলের মধ্যে রয়েছে আম, কলা, কাঁঠাল এবং আনারস। চিনির বাৎসরিক উৎপাদনের পরিমাণ ৭ মিলিয়ন টনের বেশি যা কিছু প্রক্রয়ায় উৎপাদিত হয়ে থাকে। অপরিশোধিত আখ গুড় নামে পরিচিত যা দেশীয় বাজারে বিক্রিত হয়ে থাকে।